সমবায়ের নামে প্রতারণাঃকঠোর মনিটরিং জরুরী

সমবায়ের নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে প্রতারণা থেমে নেই। ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে একদল প্রতারকচক্র। ব্যক্তিগত পকেট ভারীর জন্য সময়ের সাথে খোলস পাল্টে নব্য আওয়ামীপন্থী দাবী করে প্রতারনার ভয়াবহ জাল বিস্তার করছে এরা। বিস্তারিত আসছে......

সমবায়ের নামে প্রতারণাঃকঠোর মনিটরিং জরুরী
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

আরেকদল ভুয়া ও মিথ্যা অডিট রিপোর্ট, মিথ্যা দলিল দাখিল করে হাজার কোটি টাকা লোন তুলে  প্রতারনা করছে ব্যাংকের সাথে

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ 

ইদানীং কালে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রায়শই মাল্টিপারপাস ইনভেস্টমেন্ট ও সমবায়ের নামে ইনভেস্টমেন্ট কালেকশনের নামে প্রতারনা ও গ্রাহকদের আমানতের ক্ষতি করে লাপাত্তা হবার ঘটনার সংবাদ দেখা যাচ্ছে।

আরেকদল ভুয়া ও মিথ্যা অডিট রিপোর্ট, মিথ্যা দলিল দাখিল করে হাজার কোটি টাকা লোন তুলে  প্রতারনা করছে ব্যাংকের সাথে। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুমুখী সমবায়ের নামে এমন প্রতারণা বেড়েই চলেছে। যশোরে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ১০ হাজার গ্রাহকের লগ্নিকৃত আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে গ্রাহকরা লগ্নি ও লভ্যাংশ কিছুই হাতে পাননি। যশোরেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান দ্য সিটি ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। রাজশাহীতে বরেন্দ্র মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ডিজিটাল বিজনেস প্লাস নামে রাজশাহীর আরেকটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউনিরুট, সাকসেস প্রপার্টিজ লিমিটেড, পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ইদানীংকালে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস, কর্নফুলি ও আল এহসানের কথা কে না জানে?
দেশে সমবায় ও এমএলএম কোম্পানির নামে বিভিন্ন ‘হায় হায়’ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এতে বিপুলসংখ্যক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এমএলএম কোম্পানির নানা প্রতারণা উদ্ঘাটনের পর এ ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও সমবায়ের নামে প্রতারণা বন্ধে নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। ফলে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে সমবায় খাত। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারণে হাজার হাজার মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা অনেকেই তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন না।

কিছুদিন আগে টিআইবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র এক বছরেই লাখ লাখ সদস্য ও গ্রাহকের ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ একটি তথ্য থেকেই সমবায় সমিতিগুলোর মনিটরিংয়ের দুর্বলতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

 বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রতারণার সুযোগ রয়ে গেছে এর অংকুরেই। সরকারি তহবিলে ‘মাত্র ৩০০ টাকা’ জামানত ফি দিয়েই যে কেউ নিতে পারেন এ ধরনের সমবায় সমিতি চালুর সনদ। একটি সনদ নিয়ে একাধিক শাখা খুলে বসারও নজির রয়েছে। বহুমুখী সমবায় সমিতি খোলার এই সহজ নিয়মের কারণে দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এ ধরনের সমিতি। আর এভাবেই বিস্তৃত হচ্ছে প্রতারণার জাল। এ অবস্থায় সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতারণা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্বভাবতই সমবায় সমিতির ব্যাপারে জনমনে বিভ্রান্তি ও অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ সমবায় একটি ভালো আর্থিক কার্যক্রম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সমবায়ের মাধ্যমে দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের বিপর্যয় মোকাবেলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সমবায়ী উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

কাজেই এ খাতকে প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে অবিলম্বে। বিধি সংশোধন, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে এ খাতে বিদ্যমান অব্যবস্থা দূর করা সম্ভব। 

জানা গেছে,  সমবায়ের নামে কিংবা মাল্টিপারপাস পদ্ধতিতে অর্থ কালেকশনে সরকার নড়েচড়ে বসায় নতুন পদ্ধতিতে আমানত কালেকশন করে তা এখন বিনিয়োগ দেখানে হচ্ছে। প্রয়োজনে জয়েন্ট স্টকের গৎ বাধা নিয়মের বাইরে তালিকাভুক্তদের শেয়ারকে মাঝে মাঝেই বাড়িয়ে ইনভেস্ট বাড়তি দেখানো হচ্ছে। অথচ, এসব শেয়ার হোল্ডারদের প্রতিনিয়ত বাড়তি ইনভেস্ট করার খাত থেকে যাচ্ছে অজানা। 

(ক্রাইম ডায়রিতে আসছে ধারাবাহিক সিরিজ প্রতিবেদন।  অর্থনৈতিক খাতের এমন সব দূর্নীতির এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন তথ্য ও প্রমান সহকারে) 

ক্রাইম ডায়রি / অপরাধ জগত