মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাচার ৭৫ হাজার কোটি টাকা

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রটি বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মাধ্যমে ৫ হাজার এজেন্ট এর মাধ্যমে গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাচার ৭৫ হাজার কোটি টাকা
ছবি-ক্রাইম ডায়রি
মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাচার ৭৫ হাজার কোটি টাকা
এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
 শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

মোবাইল ব্যাংকিং। নিরবে নিভৃতে লেনদেন হওয়া সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত ও ব্যবহৃত ব্যাংকিং কার্যক্রম। কোন রকম জবাবদিহিতা ছাড়াই লেনদেন। নিরবে ঘটে যাওয়া এ লেনদেন চলছিল কোন ঝামেলা ছাড়াই। কিন্তু দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি কারবার করা ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি জানায়, দেশের ডলারের দাম বাড়ার কারণে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে সিআইডি জানতে পারে, গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। সংস্থাটি বলছে, গত এক বছরে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার (৭৫ হাজার কোটি টাকা) পাচার করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকার সমপরিমাণ অর্থের রেমিট্যান্স বঞ্চিত হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি কড়া বার্তা দেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, বুঝে বা না বুঝে কিংবা কারও প্ররোচনায় যেভাবেই হোক, যারা অবৈধপথে টাকা পাঠিয়েছেন তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। সিআইডির সাইবার গোয়েন্দারা বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচ হাজার এজেন্টের সন্ধান পেয়েছেন। তারা এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি কারবারে জড়িত। সংঘবদ্ধ এই চক্র হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। আবার বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করছে। এই ৫ হাজার এজেন্ট গেল চার মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, হুন্ডিচক্রের অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। এরপর দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় এই অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়।

তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে পাওয়া এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(শ) (১৪) ধারা অনুযায়ী অপরাধ। যা একই আইনের ৪(২)-এর ধারায় দণ্ডনীয়। এ বিষয়ে মামলা রেকর্ডসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, আটক ১৬ জনের মধ্যে ছয়জন বিকাশ এজেন্ট, তিনজন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, তিনজন বিকাশের ডিএসএস, দুজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী। তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, ৪ সিমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি ও ৩৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৪টি মামলা করেছে সিআইডি।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-আক্তার হোসেন (হুন্ডি এজেন্ট), দিদারুল আলম সুমন (হুন্ডি এজেন্ট), খোরশেদ আলম ইমন (হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী), রুমন কান্তি দাস জয় (বিকাশ এজেন্ট), রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ (বিকাশ এজেন্ট), মো. হোসাইনুল কবির (বিকাশ ডিএসএস), নবীন উল্লাহ (বিকাশ ডিএসএস), মো. জুনাইদুল হক (বিকাশ ডিএসএস), আদিবুর রহমান (বিকাশ ডিএসও), আসিফ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও), ফরহাদ হোসাইন (বিকাশ ডিএসও), আবদুল বাছির (বিকাশ এজেন্ট), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বিকাশ এজেন্ট), আবদুল আউয়াল সোহাগ (বিকাশ এজেন্ট) ও ফজলে রাব্বি (বিকাশ এজেন্ট)।

এর মধ্যে রাশেদ মনজুর ফিরোজ চট্টগ্রামে বিকাশের এজেন্ট প্রতিষ্ঠান সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার এই প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার হওয়া চারটি সিমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ টাকা পাওয়া গেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাঁও মডেল, মোহাম্মদপুর ও চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি কড়া বার্তা দেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, বুঝে বা না বুঝে কিংবা কারও প্ররোচনায় যেভাবেই হোক, যারা অবৈধপথে টাকা পাঠিয়েছেন তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

সংবাদ সম্মেলনে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি কড়া বার্তা দেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, বুঝে বা না বুঝে কিংবা কারও প্ররোচনায় যেভাবেই হোক, যারা অবৈধপথে টাকা পাঠিয়েছেন তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এই অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দায়ী-এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটা দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা এজেন্ট। তাই কোম্পানিগুলোর এজেন্ট নিয়োগে এবং মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিআইডি এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম